Monday, January 20, 2025
Home Life Style Post Covid Trauma : কোভিডপর্বের পর অফলাইন স্কুলের লেখাপড়া নিয়ে আপনার সন্তানের আতঙ্ক কাটছেই না? রইল বিশেষজ্ঞের সমাধান

Post Covid Trauma : কোভিডপর্বের পর অফলাইন স্কুলের লেখাপড়া নিয়ে আপনার সন্তানের আতঙ্ক কাটছেই না? রইল বিশেষজ্ঞের সমাধান

by blogadmin
0 comment


দু’ বছর পরে আবার স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস ফিরে এসেছে বাচ্চাদের মধ্যে ৷ এখন তো গরমের ছুটি চলছে ৷ এর পর আবার শুরু হবে ক্লাস৷ দীর্ঘ অদর্শনের পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে ওদের ভাল লাগছে ঠিকই ৷ আবার অনেকেরই স্কুল নিয়ে ভীতি বা আতঙ্কও দেখা দিয়েছে ৷ সেই ভীতি কাটানোর জন্য বাবা মায়েরা কী করবেন ?

সুপর্ণা ঘোষ : একটা মিক্সড ফিলিং বা মিশ্র অনুভূতি হয়েছে৷ প্রথমত বন্ধুদের সঙ্গে আবার দেখা হচ্ছে, গল্প হচ্ছে, একসঙ্গে খেলছে-এ সব তো স্কুলজীবনের মজার অঙ্গ৷ কিন্তু একইসঙ্গে আবার রেজিমেন্টেশনও ফিরে এসেছে৷ অনলাইন ক্লাসে তো আর অত শত নিয়ম মানা হয়নি৷ এখন আবার সেই সকালে উঠে তৈরি হওয়া, স্কুলে যাওয়া-সেই কঠোর রুটিন আর মানতে চাইছে না বা পারছে না বাচ্চারা৷

সেইসঙ্গে পড়াশোনার চাপ ও ফিরে এসেছে৷

সুপর্ণা ঘোষ : হ্যাঁ, ভীতির দ্বিতীয় কারণ সেটা৷ কোভিডের জন্য পড়াশোনার সিস্টেমে ছন্দোপতন হয়েছে, তাতে তো কোনও সন্দেহ নেই৷ প্রাথমিক থেকে শুরু করে উঁচু ক্লাস অবধি, পড়ুয়াদের ক্ষতি হয়েছে৷ এই যে অভ্যাসে ছন্দোপতন, এর ফলে একটা আতঙ্ক গ্রাস করেছে ওদের৷ নিজেদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে ওরা ভাবছে৷ নিজেদেরই প্রশ্ন করছে-আমরা কি পারব? এই যে ভীতি, এটা নিয়ে কাউকে বলতেও পারছে না৷ আবার নিজের ভিতরে রাখতেও পারছে না৷ বিশেষ করে ১৩-১৪ বছর বয়সি বাচ্চারা তো রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছে৷ ফলে কী হচ্ছে, ছোট বাচ্চাদেরও অ্যাংজাইটি বা আতঙ্ক গ্রাস করছে৷ এটা আমরা আগে দেখিনি৷ কিন্তু এখন দেখছি৷

এই ভীতি বা আতঙ্ক মনের ভিতরে চেপে রেখেও বোধহয় জটিলতা বাড়ছে?

সুপর্ণা ঘোষ : একদমই তাই৷ মনের মধ্যে তৈরি হওয়া ভীতি, আতঙ্ক, উদ্বেগ সব কিছুই বার করে দেওয়ার বা ভাগ করে নেওয়ার জন্য কিন্তু বাচ্চার একটা জায়গা চাই৷ সেটা বাবা মা হতে পারেন, আত্মীয়দের মধ্যে কেউ হতে পারেন, অনাত্মীয় কেউ হতে পারেন৷ আবার স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাও হতে পারেন৷ যাঁদের কাছে মনের কথা খুলে বলতে পারবে৷ তবে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করলে হবে না কিন্তু৷ কারণ তারা নিজেরাও উদ্বেগের শিকার৷

আরও পড়ুন : কোভিডে প্রিয়জনকে হারানোর দুঃখ নিয়েই বসতে হচ্ছে মাধ্যমিকে? মন শক্ত করার উপায় বললেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

বাচ্চা যাঁকে নিজের সমস্যার কথা বলবে, তাঁর আশু কর্তব্য কী হবে?

সুপর্ণা ঘোষ : প্রথমেই বলব সদর্থক কথা বলতে হবে বাচ্চাকে৷ হারিয়ে যাওয়া আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে৷ বলতে হবে, হ্যাঁ ঠিক আছে৷ প্রথম একটা দু’টো পরীক্ষা খারাপ হতেই পারে৷ কিন্তু তুমি ঠিক পারবে৷ বাবা মাকেও বুঝতে হবে, ওদের অভ্যাসটা চলে গিয়েছিল৷ তাই মানিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দিতেই হবে৷ আমরা বড়রাই পারি না৷ আর ওরা তো ছোট৷ ১৮ বছরের নীচে সকলেই কিন্তু আমাদের কাছে চাইল্ড৷

স্কুলেরও তো কিছু ভূমিকা থাকে এ বিষয়ে?

সুপর্ণা ঘোষ : নিশ্চয়ই৷ এখন তো সব স্কুলেই কাউন্সেলর থাকেন৷ তাঁদের সঙ্গে কথা বলা৷ একটু ফ্লেক্সিবিলিটি আনা৷ হাইব্রিড মোডে ক্লাস করা যায় কিনা, সেটা বিবেচনা করা৷ ক্লাসের সংখ্যা কমানো যায় কিনা-এগুলো একটু বিবেচনা করতে হবে৷ সিলেবাস তো শেষ করতেই হবে৷ কিন্তু তার মাঝেই ফ্লেক্সিবিলিটির কথা ভাবতে হবে৷ শুধু কনটেন্টের বোঝা না চাপিয়ে কনশাস এডুকেশন বা সচেতন শিক্ষা দিতে হবে৷ কো-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজে গুরুত্ব দিতে হবে৷ গত দু’ বছর পড়ুয়ারা কোন পরিস্থিতির মধ্যে কাটিয়েছি, সেটা বিবেচনা করে স্কুল যদি একটু সহানুভূতিশীল জায়গায় থাকে, তাহলে আমার মনে হয় ভাল হবে৷

ভাগ করে নেওয়ার পরও যদি বাচ্চার মনের সমস্যা না কাটে, তাহলে তো আপনাদের কাছে যেতেই হবে?

সুপর্ণা ঘোষ : একটুও সময় নষ্ট না করে আসতে হবে৷ মনোবিদের কাছে যাওয়া মানেই লোকে পাগল ঠাওড়াবে-এমন ধারণা কিন্তু আগের থেকে অনেকে পাল্টেছে৷ একটু বড় পড়ুয়ারা নিজেরাই আমাদের কাছে আসে সমস্যা নিয়ে৷ ছোটদের ক্ষেত্রে বাবা মাকে অগ্রণী হতে হবে৷ গত ধরা রীতি থেকে বেরিয়ে অন্য ভাবে পড়াশোনা করা যায় কিনা, সেটা দেখতে হবে৷

আরও পড়ুন : ‘ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজে বছরভর এড়িয়ে চলুন ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার এবং ঠান্ডা জলে স্নান’

বাচ্চারা তো এমনিতেই বড়দের তুলনায় অনেক বেশি ফ্লেক্সিবল?

সুপর্ণা ঘোষ : সে তো নিশ্চয়ই৷ এখন সত্যিই ওদের অসুবিধে হচ্ছে৷ তবে ছ’ মাসের মধ্যে ওরা এটা কাটিয়ে উঠবে৷ তাছাড়া এই পরিস্থিতিতে আরও যেটা দরকার, তা হল প্রয়োজনীয় হল পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া৷ প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেন ডায়েটে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে৷ সেটা শারীরিক ও মানসিক, দু দিকেই খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ বাচ্চাদের তো মস্তিষ্কের বিকাশ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি৷ সূর্যালোক থেকে ভিটামিন ডি যেন পায়, খেয়াল রাখতে হবে সেদিকেও৷

এত দিন পর বাড়ির বাইরে এত ক্ষণ থাকছে, সেটাও তো বাচ্চাদের মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে?

সুপর্ণা ঘোষ : আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি–কলকাতার নামী এক স্কুলের ক্লাস এইটের পড়ুয়া গরমের ছুটির আগে স্কুলই করতে পারছিল না৷ কারণ সে বাড়িতে সব সময় বাতানুকূল পরিবেশে থাকছিল৷ স্কুলে গিয়ে এসি ছাড়া আর থাকতেই পারছিল না! কলকাতার বেশির ভাগ স্কুলেই এখনও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্লাসরুম নেই৷ আমি এরকমও শুনেছি বাচ্চাদের হিটস্ট্রোক, সানস্ট্রোক হয়েছে৷ এটা স্কুলকেও বুঝতে হবে৷ বাবা মাকেও বুঝতে হবে৷

বাবা মা কি ওভার প্রোটেক্টিভ হয়ে আখেরে সন্তানের ক্ষতি করে ফেলেন? কারণ বাবা মায়ের শৈশবে কিন্তু বাতানুকূল যন্ত্রের এত চল ছিল না৷ কিন্তু সন্তানের একটু গরম লাগলেই তাঁদের মনে হয় রসাতলে গেল!

সুপর্ণা ঘোষ : একদমই তাই৷ যাঁর মেয়ের সমস্যার কথা বলছি, তাঁর মা-ই সেকথা বলেছেন৷ যে, তাঁদের ছোটবেলায় সারারাত লোডশেডিং ছিল৷ তার পরেও সকালে উঠে ঠিক সময়ে স্কুল গিয়েছেন৷ কিন্তু তাঁর সন্তান পারছে না৷ ফলে বাবা মাকে একটু মোটিভেট করতেই হবে৷

আরও পড়ুন : অন্তঃসত্ত্বারা এবং নতুন মা যাঁরা স্তন্যপান করাচ্ছেন, তাঁরা কি টিকা নেবেন? দ্বিধা দূর করলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক

বর্তমানে অণু পরিবারে বোধহয় বাচ্চাদের ঘিরে সুরক্ষা আরও বাড়ছে?

সুপর্ণা ঘোষ : অবশ্যই তাই৷ সেইসঙ্গে ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই৷ উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে বাবা মা দু’জনেই উপার্জন করছেন মোটা বেতন৷ সন্তানের সঙ্গে যথেষ্ট সময় কাটাতে পারছেন না৷ সেই অপরাধপ্রবণতা দূর করছেন ভোগ্যপণ্যের সমাহারে৷ বাচ্চাদের হাতে এখন আইপ্যাড! সন্তানকে কিন্তু শারীরিক ও মানসিক শ্রমের দিকে কিছুটা এগিয়ে দিতে হবে৷ বাচ্চাকে তো শিখতে হবে৷ বাচ্চা একটু ফ্রাস্টেশনের মধ্যে দিয়ে গেলে কিন্তু ক্ষতি নেই৷ তাতে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে৷

বন্ধুদের দেখেও কিন্তু বাচ্চাদের মধ্যে চাহিদা তৈরি হয়৷ এখন বাচ্চাদের জন্মদিনের পার্টি মানে কোনও থিম!

সুপর্ণা ঘোষ : এ বার যে বাচ্চার বাবা মা সেটা দিতে পারছে না, তাঁদের সন্তানের মনের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে৷ আমি বাবা মায়েদের বার বার বলছিল বাচ্চাকে একটু কষ্ট করতে দিন৷ না হলে কিন্তু ওরা জীবনে লড়তে পারবে না৷ সমস্যা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না৷

এখন তো বাচ্চারা প্রায় বাবল-এর মধ্যে বড় হয়?

সুপর্ণা ঘোষ : পুরো প্রোটেকটিভ বাবল-এর মধ্যে বেড়ে ওঠে৷ বিশেষ করে উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের মধ্যে এটা দেখা যায়৷ এতে কিন্তু বাচ্চার খুব ক্ষতি হয়৷ আমি তো বলব, বাচ্চাকে দোকানে পাঠান৷ ওকে নিজেকে হিসেব করে জিনিস কিনতে বলুন৷ কিন্তু যথেচ্ছ খরচ নয়৷ বাবা মায়ের কার্ড নিয়ে বাচ্চা নিজে জিনিস কিনছে, তা যেন না হয়৷ বরং সন্তানকে বুঝতে হবে অর্থোপার্জন করতে বাবা মাকে কতটা কষ্ট পেতে হয়৷

উল্টে বাবা মা ভাবছেন আমরা শৈশবে যা পাইনি, তা যেন আমার সন্তান পায়৷

সুপর্ণা ঘোষ : এটাও যেমন আছে, আবার অন্যদিকে হয়তো ভয়ানক শাসন করছেন৷ সেটাও ক্ষতিকর৷ এতে বাচ্চার আত্মমর্যাদা বিঘ্নিত হয়৷ আবার অন্যদিকে অকাতরে দিয়ে দেওয়াও বিপজ্জনক৷ ফলে বাবা মায়ের আচরণে একটা ভারসাম্য দরকার৷

আর একটা প্রসঙ্গে আসছি৷ কোভিডে প্রিয়জনকে হারানো ব্যথা থেকে হয়তো কোনও বাচ্চা বার হতে পারছে না৷ সেক্ষেত্রে কী হবে?

সুপর্ণা ঘোষ : শুধু কোভিড বলে নয়৷ যে কোনও শোকের চারটে ধাপ আছে৷ প্রথম ধাপে আসে অস্বীকার৷ শোককে মেনে নিতে চায় না৷ এর পর রাগ৷ কেন সে এই শোকের শিকার হল, এই প্রশ্ন আসে৷ তার পর সে ভাবতে থাকে-আচ্ছা এই পর্ব কাটিয়ে ফেললে আমি ওটা করব৷ এর পর চূড়ান্ত পর্ব হল ডিপ্রেশন৷ বাচ্চা একদম চুপ করে যায় তখন৷ এই সব ধাপ পার হলে আসে অ্যাকসেপ্টেন্স৷ এই ধাপগুলো কার ক্ষেত্রে কতটা স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করে পারিপার্শ্বিকের উপর৷ এই এনভায়রনমেন্টাল সাপোর্ট দিতে হবে৷ ওদের শোকের বহিঃপ্রকাশের ভাষা বুঝতে হবে৷ এর কোনও শর্টকাট নেই৷ শোকের ভিতর দিয়ে গিয়েই শোক মেনে নিতে হবে৷ এ ছাড়া কোনো সুইচ অফ, সুইচ অন পদ্ধতি নেই৷ বাচ্চার চারপাশে যাঁরা আছেন, তাঁদের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ৷

বাচ্চারা তো কাউন্সেলিংয়ের জন্য যায়৷ ওদের কিছু বলবেন?

সুপর্ণা ঘোষ : বলব, তোমাদের মনে যা কিছু কষ্ট, সে গুলো চেপে না রেখে খুলে বলো৷ মনঃসংযোগ করো৷ নিজের যা হবি, সেটা নিয়ে বেশি সময় কাটাও৷ তবে মোবাইল, ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকো৷ এত দিন উপায় ছিল না, করেছো৷ কিন্তু এখন খোলা হাওয়ায় বেরিয়ে এসো৷

আর অভিভাবকদের কী বলবেন?

সুপর্ণা ঘোষ : বাচ্চার স্বাস্থ্যের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন৷ কিন্তু ওদের একটু জীবনের প্রতি এক্সপোজড হতে দিন৷ আর বাচ্চার সমস্যার সমাধান করতে হলে তাদের জায়গায় গিয়ে, সমস্যাটা বুঝে তার পর সমাধান করুন৷ বাবা মাকেই আগে শিখতে হবে৷ দরকার হলে পেরেন্টিং কোর্স করুন৷ বাচ্চাকে বোঝান, সে ভাল কাজ করার জন্য এই পৃথিবীতে এসেছে৷ ভাল কাজ মানেই সব সময় মন দিয়ে পড়াশোনা নয়৷ বাচ্চাকে ভাল মানুষ হয়ে উঠতে উৎসাহ দিন৷

Published by:Arpita Roy Chowdhury

First published:

Tags: Clinical Psychology, Post Covid Trauma



Source link

You may also like

Leave a Comment

About Us

We’re a media company. We promise to tell you what’s new in the parts of modern life that matter. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo. Sed consequat, leo eget bibendum sodales, augue velit.

@2022 – All Right Reserved. Designed and Developed by Silk City Soft