ডায়াবেটিস সাধারণত দুই ধরনের হয়– টাইপ-১ ডায়াবেটিস (Type 1 Diabetes) এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes)। মোট রোগীর ৯৫% টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। টাইপ-১ ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য না-হলেও সময়মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসকে আটকানো সম্ভব। যে সমস্ত ব্যক্তির ওজন বেশি, হাই-কোলেস্টেরল বা পরিবারে ডায়াবেটিস রোগের ইতিহাস রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই আগে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে পদক্ষেপ করা উচিত।
দৈনন্দিন জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনলেই ভবিষ্যতে ডায়াবেটিসের ফলে হওয়া গুরুতর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা থেকে অনেকাংশে এড়ানো যেতে পারে। কী ভাবে ডায়াবেটিস রোগকে প্রতিরোধ করা যেতে পারে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
১. অতিরিক্ত ওজন কমানো:
ওজনের কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে, তা আমাদের সকলেরই জানা। এই কারণে এই রোগ প্রতিরোধ করতে অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। একটি গবেষণায় চিকিৎসকরা দেখতে পেয়েছেন যে, ডায়েটের পরিবর্তন এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে ৭% শারীরিক ওজন কমিয়ে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৬০% কমে গিয়েছে।
আরও পড়ুন – কাড়ি কাড়ি ওষুধ ফেল! হাজার চেষ্টাতেও ব্লাড সুগার কন্ট্রোল হয় না, চমকপ্রদ ‘ফল’ দেবে এই ‘ফুল’!
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের নির্দেশ অনুযায়ী, যে সমস্ত ব্যক্তির ডায়াবেটিস রোগের প্রাথমিক উপসর্গ রয়েছে বা প্রি-ডায়াবেটিস উপসর্গ রয়েছে, তাঁরা ৭% থেকে ১০% ওজন কমিয়ে এই রোগের সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এর থেকেও বেশি ওজন কম হলে তা শরীরের পক্ষে খুবই উপকারী।
চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রথমে ছোট ছোট লক্ষ্যমাত্রা বানাতে হবে। যেমন– সপ্তাহে ৫০০ গ্রাম বা ১ কেজি ওজন কমাতে হবে, সেটা স্থির করে তবেই ওজন কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।
২. শারীরিক সক্রিয়তা:
শরীর চর্চার অনেক উপকারিতা রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। নিয়মিত ব্যায়াম করলে ওজন কমানো যায়, ব্লাড সুগারের স্তর কম হয় এবং ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
শরীরকে সক্রিয় রাখতে কী কী ব্যায়াম করা উচিত?
অ্যারোবিক ব্যায়াম (Aerobic exercise): দ্রুত হাঁটা, সাঁতার কাটা, বাইক চালানো বা দৌড়ানোকে অ্যারোবিক ব্যায়াম বলা হয়। প্রতিদিন ৩০ মিনিট ধরে মাঝারি থেকে কঠিন অ্যারোবিক ব্যায়ামের লক্ষ্য স্থির করে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট শরীরচর্চা করলে তা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ অনেক সাহায্য করে।
আরও পড়ুন – কোলেস্টেরল-আতঙ্কে পুজোর ভোজে চিন্তা, বিশেষ পানীয় রয়েছে তো
সীমিত নিষ্ক্রিয়তা (Limited inactivity): শরীরকে সক্রিয় রাখতে দীর্ঘক্ষণ নিষ্ক্রিয়তা থেকে বিরত থাকা উচিত। অনেকটা সময় একই যায়গায় বসে না-থেকে বিশ্রামকে ছোট ছোট বিরতিতে ভেঙে নিলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
৩. পুষ্টিকর সবুজ শাক-সবজি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া:
শাক-সবজি আমাদের ডায়েটে ভিটামিন, খনিজ এবং কার্বোহাইড্রেট যুক্ত করে। কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে শর্করা, স্টার্চ এবং ফাইবার থাকে। শর্করা থেকেই আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপন্ন করে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা অনেক কমিয়ে দেয়। নীচে ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবারের একটি তালিকা দেওয়া হল।
- টমেটো, গাছের ফল এবং লঙ্কা
- শাক, ব্রোকলি এবং ফুলকপি জাতীয় স্টার্চ বিহীন সবজি
- মটরশুঁটি, ছোলা এবং মুসুর ডাল জাতীয় বীজ-ভিত্তিক খাবার
যে সমস্ত খাবারে খারাপ কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, সেগুলি এড়িয়ে চলা উচিত। এই জাতীয় খাবারে কম পুষ্টি বা ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে এবং চিনির পরিমাণ বেশি থাকে, যা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক।
৪. স্বাস্থ্যকর ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়া:
ফ্যাটযুক্ত খাবারে প্রচুর ক্যালোরি থাকে, যার কারণে এগুলি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং ওজন কমাতে নিজের ডায়েটে অসম্পৃক্ত ফ্যাট (Unsaturated Fats) জাতীয় খাবার যুক্ত করা উচিত। অসম্পৃক্ত ফ্যাটকে গুড ফ্যাটও (Good Fats) বলা হয়।
অসম্পৃক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবারগুলি হল–
- জলপাই, সূর্যমুখী, কুসুম, তুলো বীজ এবং ক্যানোলা তেল
- চিনেবাদাম, ফ্ল্যাক্সসিড এবং কুমড়োর বীজ
- স্যামন, ম্যাকরেল, সার্ডিন, টুনা এবং কড জাতীয় মাছ
মাংস এবং দুগ্ধজাত খাদ্যকে সম্পৃক্ত ফ্যাট (Saturated fat) বা ব্যাড ফ্যাট (Bad Fats) হিসেবে ধরা হয়। ডায়েটে এই জাতীয় খাবারগুলির পরিমাণ খুবই কম থাকা উচিত।
৫. সঠিক ডায়েট বেছে নেওয়া:
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করার জন্য সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল– সঠিক ডায়েট বেছে নেওয়া। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, প্যালিও বা কিটো জাতীয় ডায়েটগুলি ওজন কমাতে সাহায্য করবে ঠিকই, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদী উপকারিতা বা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে খুবই কম গবেষণা রয়েছে। এই কারণে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক ডায়েট বেছে নেওয়া খুবই জরুরি।
ডায়েটে সঠিক খাবার বেছে নেওয়ার সব চেয়ে ভালো উপায় হল, প্লেটে থাকা খাবারকে পরিমাপ করে এবং প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে তিনটি ভাগ করে নেওয়া।
প্রথম ভাগ: ফলমূলএবং স্টার্চ বিহীন শাক-সবজি
দ্বিতীয় ভাগ: শস্য জাতীয় খাবার
তৃতীয় ভাগ: মাছ বা চর্বিহীন মাংস জাতীয় পুষ্টিকর খাবার
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Blood Sugar, Diet, Exercise