টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগ হল এমন একটি শারীরিক সমস্যা, যেখানে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায় বা শক্তি উৎপাদনকারী কোষগুলি ইনসুলিনে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয় না। এক জন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের শরীরে ইনসুলিন যে ভাবে কাজ করে, এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তা পরিবর্তিত হয়ে যায়। ইনসুলিনের কাজ হল– গ্লুকোজকে কোষে কোষে পৌঁছে দেওয়া, যাতে কোষগুলি দৈনন্দিন কাজকর্ম করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। এই কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ইনসুলিন প্রতিরোধী বলা হয়।
সাধারণত মধ্যবয়স্ক বা তার বেশি বয়সিরা এই রোগে আক্রান্ত হয়। অত্যধিক ওজন বা স্থূলতার কারণে শিশু, তরুণ বা কম বয়সিদেরও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্কদের মধ্যে এই রোগ দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্তদের ৯৫ শতাংশের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস দেখা যায়।
টাইপ-২ ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি কী কী?
- ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ অনুভব হওয়া
- অতিরিক্ত তেষ্টার ভাব আসা
- দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া
- মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
- হাত-পা অসাড় হয়ে যাওয়া
- শরীরে শিহরণ অনুভূত হওয়া
- ক্লান্ত বা পরিশ্রান্ত হয়ে যাওয়া
- কাটা-ছেঁড়া বা ক্ষত সারতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সময় লাগা
- ত্বকে শুষ্ক হয়ে চুলকানি শুরু হওয়া
- বারবার ইস্ট সংক্রমণ হওয়া
- উপযুক্ত পরিমাণ খাওয়ার পরেও খিদে বেড়ে যাওয়া
- আচমকা ওজন কমে যাওয়া
- বিভিন্ন রকম সংক্রমণ হওয়া
টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগের কারণ কী?
জিনগত:
ডায়াবেটিস রোগ সরাসরি জিনগত রোগ নয়, কিন্তু সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে, যাঁদের পরিবারে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে, তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ ছাড়া, বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন যে, শরীরের ইনসুলিন হরমোন নিঃসরণ করার ক্ষমতা কিছুটা ডিএনএ-র উপর নির্ভর করে।
আরও পড়ুন – কাড়ি কাড়ি ওষুধ ফেল! হাজার চেষ্টাতেও ব্লাড সুগার কন্ট্রোল হয় না, চমকপ্রদ ‘ফল’ দেবে এই ‘ফুল’!
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা:
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা ইনসুলিন প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। যে সমস্ত ব্যক্তির ওজন বেশি হয়, তাঁদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে, বিশেষ করে যদি কোমরের চারিদিকের ওজন অতিরিক্ত বেশি হয়।
লিভার থেকে অত্যধিক গ্লুকোজ নিঃসরণ:
যখন মানবদেহের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কম থাকে, তখন প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদনের জন্য লিভার অতিরিক্ত গ্লুকোজ নিঃসরণ করে বাইরে পাঠায়। এর পর ইনসুলিন এই গ্লুকোজ কোষে কোষে পৌঁছে দেয়। খাবার খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায় এবং লিভার গ্লুকোজ পাঠানো বন্ধ করে দেয়। কিন্তু টাইপ-২ ডায়াবেটিস আক্রান্তদের লিভার রক্তে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্লুকোজ থাকার পরেও সরবরাহ থামাতে পারে না। স্বাভাবিক ভাবেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন – ব্লাড সুগার থেকে বাঁচতে চান? মেনে চলুন এই কয়েকটি টোটকা, রক্তে চিনি কমবেই
ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষ ভেঙে যাওয়া:
যদি ইনসুলিন প্রস্তুতকারী কোষগুলি ভুল সময়ে ভুল পরিমাণ বা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ইনসুলিন তৈরি করে, তবে এই কোষগুলি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই কোষ ধ্বংস হয়ে গেলে ইনসুলিন নিঃসরণ কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে ব্লাড সুগার বেড়ে যায়।
কী কী শারীরিক সমস্যার কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হতে পারে?
- প্রি-ডায়াবেটিস
- হার্ট এবং রক্তনালীর রোগ
- উচ্চ রক্তচাপ (উপযুক্ত চিকিৎসার ফলে নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে)
- কম HDL কোলেস্টেরল (গুড কোলেস্টেরল)
- উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড
- গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে ৪ কেজির বেশি ওজনের শিশু জন্ম দেওয়া
- গর্ভাবস্থায় গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া
- পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (PCOS)
- অন্যান্য কী কী কারণে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগ হয়?
- অতিরিক্ত বিশ্রাম এবং শারীরিক কার্যকলাপের অভাব
- অত্যধিক ঘুম বা খুবই কম ঘুমোনো
- অতিরিক্ত স্ট্রেস
- নিয়মিত অ্যালকোহল পান করা
টাইপ-২ ডায়াবেটিসকে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়?
ওজন কমানো:
কয়েক কেজি ওজন কমালে তা এই রোগে আক্রান্তদের জন্য খুবই উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। শারীরিক ওজনের ৫% কমালে তা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সাহায্য করবে। যদিও ডাক্তারদের মতে, এই রোগে আক্রান্তদের কমপক্ষে ৭% ওজন কমানো উচিত। অর্থাৎ, কোনও ব্যক্তির ওজন যদি ১০০ কেজি হয়, তবে ৭ কেজি কমালেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া:
নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেমন খাবার খাওয়া উচিত, নীচে তার একটি তালিকা দেওয়া হল।
১। কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার
২। সবুজ শাক-সবজি এবং ফলমূল
৩। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
শরীরচর্চা:
দৈনিক ৩০ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট করে শারীরিক কার্যকলাপ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। চিকিৎসকরা নিয়মিত হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো বা যোগ ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে থাকেটাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের নির্দিষ্ট কোনও ডায়েট প্ল্যান নেই। চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে কার্বোহাইড্রেট সম্বন্ধে ভালো ভাবে জেনে একটি দৈনিক খাদ্যতালিকা বানানো যেতে পারে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Blood Sugar, Health Tips