দু’ বছর পর ফিরেছে স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস ৷ পাশাপাশি মরশুম পরিবর্তনের সঙ্গেই চলছে ডেঙ্গির প্রকোপ৷ তার মাঝেই আতসবাজির পোড়ানোর অমোঘ আকর্ষণ৷ মরশুমি অসুস্থতা এবং বাজির পোড়ার ক্ষত এড়িয়ে কীভাবে সুস্থ রাখবেন আপনার বাচ্চাকে? জানালেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সুমন্ত ভট্টাচার্য৷ কথা বললেন অর্পিতা রায়চৌধুরী৷
প্রতি বছরই দুর্গাপুজোর পর কালীপুজোর এই সময়টা ঋতু পরিবর্তনের পর্ব৷ গ্রীষ্ম বা বর্ষা চলে গিয়ে হেমন্তের মধ্যে দিয়ে শীত ধীরে ধীরে তার আগমন বার্তা দেয়৷ চলতি কথায় মরশুম পরিবর্তন বা ‘সিজন চেঞ্জ৷’ এই সময়েই কিন্তু বাচ্চাদের মধ্যে অসুখের প্রাদুর্ভাবও বেড়ে যায়৷ এ বছরও তার অন্যথা হয়নি৷ হ্যান্ড ফুট মাউথ ডিজিজে বাচ্চারা কয়েক মাস ধরেই আক্রান্ত হচ্ছে৷ তার উপর ডেঙ্গি আছে৷ কোনও এক বছর ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ে৷ আবার কোনও বছর কম থাকে৷ ডেঙ্গির বাহক এডিস ইজিপ্টাই মশা৷ এই রোগ নিয়ন্ত্রণে দু’দিকে খেয়াল রাখতে হবে৷ প্রথমত এলাকাভিত্তিক সচেতনতা, দ্বিতীয়ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা৷ যে এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, সেখানে বেশি সতর্কতা নিতে হবে৷
ব্যক্তিগত সুরক্ষার ক্ষেত্রে প্রথমেই মনে রাখবেন ডেঙ্গি ছোঁয়াচে অসুখ নয়৷ তবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে মশার কামড় থেকে৷ বাড়িতে এবং বাইরে মশার কামড় থেকে নিজেকে বাঁচাতে মশক নিরোধক ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন৷ বাচ্চার বয়স ৬ মাস হয়ে গেলে ভাল কম্পানির নিরাপদ মশক নিরোধক ক্রিম লাগাতেই পারেন৷ যদি ত্বকে ক্রিম লাগাতে না চান, পোশাকে যে লোশন লাগাতে হয়, সেই রোল অন-ও ব্যবহার করতে পারেন৷ ডেঙ্গি কিন্তু সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্তও ব্যাধি৷ বাড়িতে বাচ্চা থাকলে বাড়ি সংলগ্ন এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আছে কিনা দেখুন৷ আবর্জনা পরিষ্কার করুন নিয়মিত৷ জল কখনওই জমতে দেবেন না৷ পুরনো আমলের চৌবাচ্চায় জল জমলে সেখানে কিন্তু ডেঙ্গির মশা বংশবিস্তার করতে পারে৷ তাই চৌবাচ্চায় জল না জমানোই ভাল৷
আরও পড়ুন : দীপাবলিতে আতসবাজির ধোঁয়ায় চুলের দফারফা হতে পারে, জানুন চুলের যত্নের সহজ উপায়
এ সময়টা এমন এক পরিস্থিতি, যখন স্কুল খুলে গিয়েছে৷ আবার অন্যদিকে উৎসবের মরশুমও চলছে৷ অতিমারির দু’ বছর পর বাচ্চারা এ বার লাগামছাড়া ভাবে মেতেও উঠেছে পুজোর আনন্দে৷ তার থেকে তো আর ওদের আটকে রাখা যাবে না৷ তাই সতর্কতা প্রয়োজন৷ সর্দিকাশির মতো যে অসুখগুলি ছোঁয়াচে, সেখানে অন্য বাচ্চাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে পারলে ভাল৷ সেইসঙ্গে আপনার বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে৷ সেল্ফ ইমিউনিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ আরও একটি স্বাস্থ্যকর দিক হল হাইড্রেশন৷ শরীরে জলের মাত্রা বজায় সঠিক বজায় রাখতে হবে৷ যে কোনও ভাইরাল ইনফেকশনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় হল হাইড্রেশন৷ জল এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলের রস রাখুন বাচ্চার ডায়েটে৷ যে চিকিৎসক আপনার বাচ্চাকে দেখেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলে দৈনিক জলপানের মাত্রা ঠিক করুন৷ যেটা ন্যূনতম দরকার, সেটা তো দিতেই হবে৷ প্রয়োজনে বাড়তি জল পান করলেও সমস্যা নেই৷
আরও পড়ুন : মেনোপজ কি চলেই এল, বুঝবেন কোন কোন উপসর্গ দেখে, জানুন ও সতর্ক হোন
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রথমেই বলব আমলকির রসের কথা৷ বাড়িতে বানাতে পারলে খুবই ভাল৷ নয়তো কিনতেও পারেন৷ আমলা বা আমলকির রস খান৷ তার পর বলব সাইট্রাস ফ্রুটের কথা৷ লেবু জাতীয় ফল, আপেল রোজ খেতে হবে৷ সেইসঙ্গে বাচ্চাকে দিন ড্রাই ফ্রুটস৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এটাও কিন্তু রোজ খেতে হবে৷ কাজুবাদাম, আমন্ড, ওয়ালনাট ক্রাশ করে রাখুন৷ তার পর রোজ এক চামচ করে বাচ্চাকে খেতে দিন৷ দুধের সঙ্গে দিতে পারেন৷ আবার এমনিও দিতে পারেন৷ এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে৷
এ বার আসব আতসবাজির প্রসঙ্গে৷ কালীপুজো যখন, বাচ্চাদের তো আগ্রহ থাকবেই আতসবাজির দিকে৷ কিন্তু বাজি যতই পরিবেশবান্ধব হোক না কেন, পোড়ানো হলে ধোঁয়ার সঙ্গে কার্বন মনোক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন হবেই৷ যা শরীরে ঢোকা কোনওমতেই কাম্য নয়৷ ক্ষতির পরিমাণ বা ক্ষতির প্রভাব কিছুটা কমাতে মাস্ক ব্যবহার করুন৷ গত দু’ বছরে মাস্ক তো জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে গিয়েছে৷ তবে অতিরিক্ত ধোঁয়া হয়ে গেলে কিন্তু মাস্কে দমবন্ধ লাগবে৷ সেদিকেও খেয়াল রাখবেন৷ যেন শ্বাসপ্রশ্বাসে কোনও অসুবিধে না হয়৷ আতসবাজি তো সাময়িক আনন্দ দেয়৷ আমি বলব এর থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখাই শ্রেয়৷ বিশেষ করে যে সব বাচ্চার ফুসফুসজনিত সমস্যা আছে, হাঁপানির প্রবণতা আছে, ঘন ঘন ঠান্ডা লাগে, তাদের কিন্তু আতসবাজি বা ধোঁয়ার কাছে যাওয়া যাবে না৷ কারণ এর ফলে ধূলিকণা ও দূষণে ফুসফুসের আরও ক্ষতি হবে৷ অ্যালার্জির প্রবণতাও বাড়তে পারে৷
আতসবাজির আরও একটি বিপদ হল ত্বকে ছ্যাঁকা লাগার আশঙ্কা৷ যদি দুর্ঘটনাবশত ছ্যাঁকা লাগে বা হাল্কা পুড়ে যাওয়ার ক্ষত হয়, তাহলে প্রথমেই সেই জায়গায় বরফ দিন৷ প্রাথমিক চিকিৎসা বলতে এটাই৷ তার পর চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ দিন৷ কোনওভাবে ক্ষত গভীর হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে৷ নিজে নিজে ডাক্তারি না করে সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন৷ লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট, কোনওভাবেই বাচ্চাকে একা একা বা বন্ধুদের সঙ্গে বাজি পোড়াতে অনুমতি দেবেন না৷ আপনি নিজে থাকতে পারলে খুবই ভাল৷ নয়তো দেখুন একজন অভিভাবক যেন সেখানে উপস্থিত থাকেন৷ উৎসব এবং ঋতু পরিবর্তনের আনন্দ উপভোগ করুন, তবে সতর্কতার সঙ্গে৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Child care, Seasonal disease