শিশুদের বিছানা ভিজিয়ে ফেলা একটি অতি সাধারণ ঘটনা। কিন্তু বয়স বাড়লেও অভ্যাসের বদল না হলে এটি একটি জটিল সমস্যা হিসাবে গুরুত্ব দিতে হবে। এই বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন চিকিৎসক সঞ্জয় পান্ডে।
চিকিৎসকের মতে, শিশুর বয়স ৬ থেকে ১৫ হওয়ার পরেও যদি শিশু বিছানা ভিজিয়ে ফেলে তবে অবশ্যই সাবধান হওয়া উচিত। যদি ৬ থেকে ১৫ বছরের শিশু রোজদিন বিছানা ভিজিয়ে ফেলে বা সপ্তাহে একবারও বিছানা ভিজিয়ে ফেলে তবে তখনও সাবধান হতে হবে।
প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত শিশুদের বিছানা ভিজিয়ে ফেলার সমস্যাটার দিকে লক্ষ্য রাখা। এবং ৬ থেকে ১৫ বছরের শিশুরাও যদি নিয়মিত বিছানা ভিজিয়ে ফেলে তবে তাদের সঠিক চিকিৎসা ও থেরাপির প্রয়োজন।
শিশুদের এই সমস্যাটির দিকে যথেষ্ট নজর দেওয়া উচিত। অবহেলা করা উচিত নয়। শিশু বয়সে মস্তিষ্ক এবং মূত্রাশয়ের ছন্দ সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হয় না ফলে অজান্তেই শিশুরা বিছানা ভিজিয়ে ফেলে। সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের মধ্যে টয়লেট প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কিন্তু সেটা দিনের বেলায়। দিনের বেলায় শিশরা মা-বাবার সান্নিধ্যে থাকে কিন্তু রাতের বেলায় গভীর ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ছন্দের পরিপ্রেক্ষিতে মস্তিষ্ক এবং মূত্রাশয়ের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে পারে না। প্রতিটা বাবা মাই ভাবে বিষয়টি সময়ের সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই তা হয় না।
আরও পড়ুন: অকালেই টাক পড়ছে? একরাশ ঘন, কালো চুল পেতে মানুন এই সহজ নিয়ম
বয়স বাড়ার পরেও শিশুরা বিছানা ভিজিয়ে ফেললে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে, ইউরোলজিস্টকে দেখতে হবে এবং কোনও জটিল শারীরিক সমস্যা আছে কি না তা সনাক্ত করতে হবে।
সাধারণত শিশুরা বিছানা ভিজিয়ে ফেললেও এই প্রবণতা মধ্যবয়সী এবং বয়স্কদের মধ্যেও থাকতে পারে। যারা রাতে প্রচুর জল পান করেন গভীর ঘুমের মধ্যে তারাও বিছানা ভিজিয়ে ফেলে তাই বেরাতে গেলেও তারা আতঙ্কে থাকে।
যদি কোনও শিশুর বিছানা ভেজানোর সমস্যা থাকে তবে তাদের ডাক্তার এবং তাদের পিতামাতাদের সাথে বসে এই বিষয়ে কথা বলতে হবে। কখনও কখনও শিক্ষকদেরও বিষয়টিতে জড়িত থাকতে হয়। শিশুটির কোনও মানসিক আঘাত পেয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টা করতে হবে। তার বিছানা ভেজার অভ্যাসের পেছনে যৌন নির্যাতনের কোনো ভূমিকা নেই তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক সময় স্কুল বা শহর পরিবর্তনের ফলে শিশুদের মানসিক অবস্থারও পরিবর্তন হয়। যার কারণে অবচেতন মনে শিশু বিছানায় প্রস্রাব করে ফেলে।
অনেক সময় শিশু বিছানা ভিজাতে না চাইলেও উত্তেজনার কারণে হঠাৎ করেই প্রস্বাব করে ফেলে। একটি শিশুর জন্য এটি বলাও খুব কঠিন যে সে কোন মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে কি না এবং তাই এটি সনাক্ত করতে হবে। যাদের হঠাৎ বিছানা ভেজানোর অভ্যাস রয়েছে তাদের সঙ্গে বেশি করে কথা বলতে হবে ।
শিশুরা বিছানা ফেললে রেগে না গিয়ে বিষয়টির কারণ মূল্যায়ণ করা উচিৎ। শিশুরা দিনের বেলাও বিছানা বা প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলছে কি না সে বিষয়েও নজর দিতে হবে। এই সমস্যা দুই ধরনের হতে পারে এক পো পলি অ্যাসিমটোমেটিক এবং মোনো অ্যাসমটোমেটিক । পো পলির ক্ষেত্রে শিশুরা দিনের বেলাতেও বিছানা ভিজিয়ে ফেলতে পারে এবং মনো পলিতে শুধু রাতের বেলা বিছানা ভিজিয়ে ফেলে।
তাই শিশুদের সমস্যাগুলি চিহ্ণিত করে চিকিৎসা করতে হবে । অনেক শিশু আবার তাদের জামা কাপড়ে প্রস্রাব করে ফেলে একে প্রিসিম্পটম্যাটিক বলা হয়।
এই সমস্ত শিশুকে প্রচুর পরিমানে বিহেভেরিয়াল বা আচরণগত থেরাপির মধ্যে রাখতে হবে। যে সমস্ত শিশুরা শুধুমাত্র রাতে বিছানা ভিজিয়ে ফলে তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে । তাদের ঘুমানোর ২ ঘন্টা আগে পর্যন্ত আর জল খাওয়ানো চলবে না।
রাতের খাবার এবং জল খাওয়ার মধ্যে কমপক্ষে দুই ঘন্টার ব্যবধান রাখতে হবে ।
সন্ধ্যায় প্রচুর পানীয়, বিশেষ করে কফি, চা, কোল্ড ড্রিঙ্কস ইত্যাদি পান করা চলবে না।
শিশুদের বিছানা-ভেজার সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য খেয়াল রাখতে হবে তরল খাবার কমিয়ে দিলে কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সে বিষয়েও লক্ষ রাখতে হবে ।
তাদের প্রশিক্ষণ দেওয় অত্যন্ত জরুরি। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও লক্ষ রাখতে হবে যাতে তারা স্কুলে যেতে পারে বা সবার সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে মিশেতে পারে।
আমাদের উচিৎ বিষয়টিকে একদম অবহেলা না করে সঠিক সময়ে ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া।
এবং ক্রমাগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শিশুদের এই সমস্যাটির দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং এই সমস্যাটিকে সম্পূর্ণ ভাবে সমাধান করার প্রচেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসক , স্কুল, পিতামাতা সকলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সকলে মিলে শিশুদের এই সমস্যা সমাধান করার জন্য সহায়তা করতে হবে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Urine Problem